মাদ্রাসার গা ঘেঁষে ইটভাটা ধুলা ধোঁয়ায় শিশুদের ভোগান্তি

মাদ্রাসার গা ঘেঁষে ইটভাটা ধুলা ধোঁয়ায় শিশুদের ভোগান্তি,দূষণ তো আছেই, ভাটার গাড়িগুলো যেভাবে আসা-যাওয়া করে দিনভর, তাতে অভিভাবকেরা শিশুদের এখানে পাঠাতে ভয় পান।মাদ্রাসাটির ধার ঘেঁষে ইটভাটা। তাতে আগুন জ্বলে। ইট পোড়ে। মাটি, খড়ি, ইট বোঝাই করে ট্রাকের পর ট্রাক আসে। ধুলা আর ধোঁয়া প্রচুর। এর মধ্যেই চলে শিক্ষার্থীদের আসা-যাওয়া, পড়াশোনা আর খেলাধুলা।মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার বালিদিয়া ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামে এ চিত্র দেখা গেছে। বড়রিয়া গোপালপুর গরিব হোসেন বারী মিয়া স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা নামে প্রতিষ্ঠানটি ১৯৮৪ সালে ৩৬ শতক জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়। শিশু থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত লেখা পড়া হয় সেখানে। বর্তমানে শিক্ষার্থী ১২২ জন। আশপাশের তিনটি গ্রাম থেকে এখানে পড়তে আসে শিশুরা। অনুদানভুক্ত স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি এই মাদ্রাসায় পাঁচজন শিক্ষক কর্মরত।

 

মাদ্রাসার গা ঘেঁষে ইটভাটা ধুলা ধোঁয়ায় শিশুদের ভোগান্তি

 

মাদ্রাসার গা ঘেঁষে ইটভাটা ধুলা ধোঁয়ায় শিশুদের ভোগান্তি

 

‘আরব ইটভাটা’ নামের ভাটাটি নব্বইয়ের দশকে মাদ্রাসাটির একেবারে গায়ের ওপর স্থাপিত হয়। ক্রমে এর সম্প্রসারণ হয়েছে। বর্তমানে প্রায় সাত একর জমির ওপরে চলছে এর কার্যক্রম। মাদ্রাসার সঙ্গে জমি নিয়ে বিরোধও আছে ভাটাটির। প্রায় তিন দশক ধরে এসব দ্বন্দ্ব ছাপিয়ে পাশাপাশি থাকলেও সম্প্রতি ভাটার দূষণের ব্যাপারে সোচ্চার হয়েছে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ও অভিভাবকেরা। তাঁরা বলছেন, অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ভাটাটির কারণে অস্তিত্বসংকটে পড়েছে মাদ্রাসাটি।

ওই মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাকালীন শিক্ষকদের একজন মো. মনিরুজ্জামান গত বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, একসময় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী ছিল এখানে। এই ভাটার কারণে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ক্রমেই কমছে। ধুলাবালু তো আছেই, ভাটার গাড়িগুলো যেভাবে আসা-যাওয়া করে দিনভর, তাতে অভিভাবকেরা শিশুদের এখানে পাঠাতে ভয় পান।বুধবার বড়রিয়া গোপালপুর গরিব হোসেন বারী মিয়া স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসায় গিয়ে দেখা যায়, দুটি টিনশেড স্থাপনায় শিশুদের ক্লাস চলছে। এর একটি পাকা

দেয়ালঘেরা, আরেকটি টিনের বেড়া দেওয়া। শিক্ষার্থীদের জানালার কয়েক ফুট দূরেই ইটের সারি। শিক্ষার্থীরা জানায়, কিছুক্ষণ পরপর ধুলার আস্তরণ পড়ে বই ও বেঞ্চের ওপর। যান চলাচলের শব্দে কানে তালা লাগে।প্রধান শিক্ষক মো. নজরুল ইসলাম, ইটভাটার ধোঁয়া, ট্রাকের ধোঁয়া, গাছের কাঠ পোড়ানো ধোঁয়া বায়ু দূষিত করছে। ফলে সাধারণ মানুষ নানা জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত হতে হচ্ছেন।লুলু মিয়া (৪৫) নামে গোপালপুর গ্রামের এক বাসিন্দা বলেন, ভাটার কারণে স্থানীয় বাসিন্দাদেরও

ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। কারণ, ভাটার আশপাশে অনেক বসতি রয়েছে। পথ চলাচলে বাধা সৃষ্টি হয়; ধুলো–ময়লা তো আছেই।এমন পরিস্থিতিতে গত জানুয়ারি মাসে ওই ভাটা বন্ধের আবেদন জানিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর, স্থানীয় প্রশাসনসহ বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি দেয় মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। বড়রিয়া গোপালপুর গরিব হোসেন বারী মিয়া স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মো. শাহীন আজাদ জানান, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ওই ভাটায় অভিযান চালায় পরিবেশ অধিদপ্তর।

 

google news
গুগোল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

ওই অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন পরিবেশ অধিদপ্তরের যশোর জেলা কার্যালয়ের তৎকালীন উপপরিচালক সাঈদ আনোয়ার (বর্তমানে ফরিদপুর জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক)। গতকাল বৃহস্পতিবার মুঠোফোনে পরিবেশ অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন আইন ২০১৩ অনুযায়ী, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এক কিলোমিটারের মধ্যে কোনো ভাটা স্থাপন করা যাবে না। যেসব ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে কাঠ পোড়ানো হয়, তারও বৈধতা পাওয়ার কোনো সুযোগ

নেই। এ কারণে ওই ভাটা ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। নগদ টাকা জরিমানা আদায় এবং ভাটা সরিয়ে নেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল।জানতে চাইলে আরব ইটভাটার মালিক মেজবাহুল ইসলাম গতকাল , ‘১৯৯০ সালের আগে থেকে ওখানে আমাদের ইটভাটার ব্যবসা। ওই প্রতিষ্ঠানের ওপর অনেক পরিবারের আয়রোজগার নির্ভর করে। এর আগে স্থানীয় লোকজন আমাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ দেননি। গত ফেব্রুয়ারিতে পরিবেশ অধিদপ্তর আমাদের মে মাস পর্যন্ত সময় দিয়েছে।

আমরা ব্যবসা সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। শিগগিরই ওই এলাকা থেকে ভাটা সরিয়ে নেওয়া হবে। তবে ওই মাদ্রাসার দখলে আমাদের ৩৯ শতক জমি রয়েছে। তাদেরও এখন সেসব জমি ছাড়তে হবে।’জেলা প্রশাসন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মহম্মদপুরের আরব ইটভাটাটি অনেক পুরোনো ও স্থায়ী চিমনির হলেও পরিবেশ ছাড়পত্র নেই। ফলে জেলা প্রশাসনেরও নিবন্ধন নেই।জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবু নাসের বেগ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই ভাটার পাশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে, এটা আমাদের নজরে ছিল না। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

 

মাদ্রাসার গা ঘেঁষে ইটভাটা ধুলা ধোঁয়ায় শিশুদের ভোগান্তি

 

আরও পড়ুন:

১ thought on “মাদ্রাসার গা ঘেঁষে ইটভাটা ধুলা ধোঁয়ায় শিশুদের ভোগান্তি”

Leave a Comment